About Amanat Safa Badrunnesa Mohila College
দক্ষিণ চট্টগ্রামের নারী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র, একটি আধুনিক ও অনুকরনীয় উচ্চ বিদ্যাপীঠের নাম আমানতছফা বদরুননেছা মহিলা কলেজ । সবুজে ঘেরা, পত্রপল্লবে আচ্ছাদিত, নিভৃত পল্লী চন্দনাইশে নারী শিক্ষার আলো জ্বালানোর মহতী উদ্দেশ্যে ১৯৯২ সালে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী-মহান পুরুষ, দেশবরেণ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা, খ্যাতিমান ব্যাক্তিত্ব ড. কর্নেল (অবঃ) অলি আহমেদ বীরবিক্রম মহোদয় এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। বিশাল ও দৃষ্টিনন্দন এই কলেজে অবকাঠামোগত সব ধরনের সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান আছে। কলেজে বিরাজমান শিক্ষার পরিবেশ, গুনগত মান অর্জনের নিরন্তর চেষ্টা, শ্রেণীকক্ষে পাঠদান প্রক্রিয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক ও পরীক্ষা পদ্ধতি অনেকের কাছে অনুকরনীয় দৃষ্টান্তে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯৯৪ সালে এই কলেজ ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত হয়। বর্তমানে এই কলেজে স্নাতক (পাস) শ্রেণীতে বিএ, বিএসএস ও বিবিএস কোর্স পরিপূর্ণভাবে চালু আছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠাতা মহোদয় এই কলেজে কয়েকটি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করার প্রস্তাব দেন। ফলে কলেজ প্রশাসন অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন যা প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করা যায়, শীঘ্রই এই কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু হয়ে এটা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তরিত হবে। ফলে চন্দনাইশ এর ছাত্রীদের ঘরে বসেই এই কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করার অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হবে। এতদাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত
মানুষের কাছে শিক্ষার আলো পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে আজ থেকে ২৮ বছর আগে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আজ সেই আলোকবর্তিকা অনেক গুণিজনের হাত ধরে আমাদের কাছে পৌছেছে। স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, অধ্যাপক, ব্যাংকার, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ নানা গুণে গুনাম্বিত অত্যন্ত প্রতিভাবান ব্যাক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত একটি উঁচু মানের পরিচালনা পর্ষদ কলেজটি পরিচালনার গুরুদায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। মেধাবী, দক্ষ, অভিজ্ঞ ও নিবেদিতপ্র্রাণ একঝাঁক উদ্যমী ও তরুণ শিক্ষক এবং ১৬০০ মেধাবী শিক্ষার্থীর দীপ্ত পদচারনায় সতত মুখরিত এই কলেজ ক্যাম্পাস। একটি সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে তাঁরা এতদাঞ্চলের নারী সমাজকে আলোকিত করার প্রত্যয়ে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এইচএসসি ও ডিগ্রি কোর্সসমুহের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলও দিন দিন আপগ্রেড হচ্ছে। কলেজের ২৮জন শিক্ষক চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এবং ১৮ জন শিক্ষক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক ও পর্যবেক্ষক হিসেবে পাবলিক পরীক্ষসমুহ পরিচালনায় মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। কলেজের উদ্দেশ্য ও আদর্শ বাস্তবায়ন এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রয়াস হিসেবে নেয়া হয়েছে ব্যাপক ও বিস্তৃত সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম, যেমন- রোভার স্কাউট, রেঞ্জার গাইড, যুব রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের কার্যক্রম। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা অনায়াসেই এসব ইউনিটের সাথে যুক্ত হয়ে নিজের জীবনকে গড়ার এবং আধুনিক সমাজ বির্নিমানে অবদান রাখতে পারবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক প্রতিভার অন্বেষণ, লালন ও বিকাশের লক্ষ্যে অসংখ্য কর্মসূচি পালন করা হয়ে থাকে প্রতিবৎসর, যেমন : ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, অন্তরাঙ্গন প্রতিযোগিতা, ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সঃ), বিতর্ক প্রতিযোগিতা, শিক্ষা সফর, অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় দিবস সমুহ পালন প্রভৃতির ফলে ভালো ফলাফল ও বহুমুখী প্রতিভার কারণে শিক্ষাথীরা আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রশংসনীয় স্থান করে নিতে সক্ষম হচ্ছেন। উল্লেখ্য, এ কলেজেরই অসংখ্য প্রাক্তন ছাত্রী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি-বেসরকারি কলেজের অধ্যাপক ও পুলিশ অফিসার সহ বিভিন্ন দায়িত্ব পূর্ণ পদে তথা শিক্ষা, প্রশাসন, স্বাস্থ্য, বিচার, পুলিশ বাহিনী ও প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে নিয়োজিত হয়ে স্বীয় মেধার স্বাক্ষর এবং দেশ সেবায় অনন্য অবদান রাখছে। যা সত্যিই গৌরবের ও আনন্দের বিষয়। প্রতিবছরই ডিগ্রি কোর্সের ছাত্রীরা কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করছে। ২০১০ সালে ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষায় একসাথে ৬ জন ছাত্রী ফাস্ট ক্লাস অর্জন করে তাদের মেধার উৎকর্ষতা প্রদর্শন করে কলেজের শিক্ষার মানকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। কালপ্রবাহে সৃষ্ট এরূপ অনন্য কীর্তিমান আরো বহু শিক্ষার্থী সগৌরবে ছড়িয়ে আছেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দেশ-দেশান্তরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই কলেজের ছাত্রীদের প্রতিষ্ঠা ও প্রতিভার প্রদর্শন নিঃসন্দেহে গর্বের এবং গৌরবের বিষয়। এই কলেজের মর্যাদা ও প্রশংসনীয় অবস্থান সমুন্নত রাখার দায়িত্ব শিক্ষাথী-শিক্ষক অভিভাবকসহ সকলের। শিক্ষকেরা একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবন আলোকিত করার দীপ্ত প্রত্যয়ে সর্বদা কর্মতৎপর থাকেন। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সুদৃষ্টি, অভিভাবকদের আন্তরিক সহযোগিতা এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোযোগী দৃষ্টিভঙ্গী ও তার পরিপূর্ন বাস্তবায়ন তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে সহায়ক হবে। সেই দিকনির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যেই প্রনয়ণ করা হয়েছে একাডেমিক ক্যালেন্ডার । একজন শিক্ষার্থীকে পুরো কোর্সে করনীয় কাজ সম্পর্কে সম্যক ধারনা দিবে এই ক্যালেন্ডার। একটি সামগ্রিক শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক একটি ছক্ শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়াই এই একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রনয়ণের মূল উদ্দেশ্য। আশা করা যায়-- এই কলেজে অধ্যয়নরত প্রতিটি শিক্ষার্থী এই প্রচেষ্টার সুফল পাবে এবং যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতঃ সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের মাধ্যমে নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসেবে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপযুক্ত করে তৈরী করে নিতে পারবে। প্রকৃতির অপরূপ শোভামন্ডিত বিস্তীর্র্ণ সমতল ভূমির উপর বি¯তৃৃত এই কলেজের বিশাল ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে একটি ৪ তলা বিশিষ্ট বিশালাকার একাডেমিক ভবন, ৪তলা বিশিষ্ট আরেকটি আই সি টি ভবন, প্রশাসনিক ইউনিট, ১০০ শয্যার একটি ছাত্রী নিবাস, ছাত্রী মিলনায়তন, দুটি সুসজ্জিত কম্পিউটার ল্যাব, একাধিক মালটিমিডিয়া স্মার্ট ক্লাস রুম, একটি সমৃদ্ধ আধুনিক লাইব্রেরী, একটি বড় হল রুম, একটি সমৃদ্ধ বিজ্ঞানাগার, ক্যান্টিন, বিশাল খেলার মাঠ, দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান, দর্শনীয় রকমারী সারি সারি সবুজ গাছের বাগান এবং একটি শহীদ মিনার । ১৯৯২ সালে চট্টলার নারী জাগরনের যে অভিযাত্রা কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিলো তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। দীর্ঘ ২৮ বছরের গৌরবোজ্জ্বল এবং জ্ঞানগত সমৃদ্ধি কলেজকে দিয়েছে বিরল সম্মাননা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারী কলেজ সমূহের মধ্যে অনন্য অবস্থান ও মর্যাদা। কলেজের এই গৌরব, মর্যাদা ও সম্মাননার সফল আবর্তন সম্ভব হয়- মূলত কলেজের দক্ষ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার গুনগত মান, কলেজের শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতা এবং পরীক্ষায় মানসম্মত ফলাফল প্রভৃতির কারণে। দক্ষ জনশক্তি তৈরীর প্রাণকেন্দ্র, এই কলেজ দীর্ঘ ২9 বছর ধরে সেই ঐতিহ্যই বহন করে চলেছে।